নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা

জনবলের সংকটে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। এতে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকের। রোগীদের এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে ভিন্ন রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হতে হচ্ছে কিংবা অন্য হাসপাতালে রোগীদের রেফার করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার রোগী।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের ২২৫টি পদের বিপরীতে জনবল রয়েছে ১৮৭ জন। হাসপাতালে শূন্য পদ রয়েছে ৩৮টি। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার ৩৫টি পদের মধ্যে তিনটি শূন্য পদ। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের ১২২ পদের বিপরীতে ছয়টি পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ২৫ পদের বিপরীতে পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৪৩ পদের মাঝে ২৪টি পদ খালি রয়েছে। হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা যায়, হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট, নাক-কান-গলা বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে কোনো চিকিৎসক নেই। এছাড়া অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর এক জন, নার্সিং সুপারভাইজার দুই জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স চার জন, সেবিকা/সেবক পদে দুই জন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ফার্মাসিস্ট পদে একটি পদ শূন্য রয়েছে। এদিকে হাসপাতালের বিভিন্ন পদে আউটসোর্সিং হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ৩০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই চতুর্থ শেণির কর্মচারী।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিন এই হাসপাতালে হাজারখানেক রোগী বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নেয়। প্রায় সময়ই ভর্তি রোগীতে শয্যা পূর্ণ থাকে। স্বল্প জনবল দিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। অধিকাংশ রোগীর মুখে হতাশার ছাপ। কারণ সরকারি অর্থে চিকিৎসা করতে এসে হয়তো নির্ধারিত ডাক্তার পায়নি কিংবা রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এমনই একজন ভুক্তভোগী ফতুল্লার আসমা আক্তার। দীর্ঘদিন দুই কানের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এসেছিলেন কানের চিকিৎসা করাতে। কিন্তু কানের ডাক্তার না থাকায় তিনি সাধারণ মেডিক্যাল অফিসারকে দেখাতে বাধ্য হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দ্বিতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে জনবল প্রয়োজনের তুলনায় এমনিতেই কম। এর মধ্যে আবার সেখানে শূন্য পদ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে মেশিন থাকলেও পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের পক্ষে এত পরিমাণ রোগীর পরীক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) এস কে ফরহাদ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে জনবলের সংকট রয়েছে। তিন জন সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রয়োজন। এছাড়া নার্স ও অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ চতুর্থ শ্রেণির একাধিক পদ খালি রয়েছে। এসব জনবলের ঘাটতি পূরণ হলে আমরা আরো ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে পারব।’ জেলার সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, জেনারেল হাসপাতালে জনবলের সংকট রয়েছে। তবে এই জনবল দিয়েই আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে জনবলের প্রয়োজন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি শিগিগর প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া যাবে।’