শারীরিক সম্পর্কের পর প্রেমিকাকে হত্যা, কথিত স্ত্রীসহ ঘাতক প্রেমিক গ্রেফতার

মাত্র পাঁচ দিনের পরিচয়। তারপর প্রেম। এই পরিচয় ও প্রেমের সূত্রে কবিতা রানীকে (২৭) বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে গত শনিবার রাতে আবু বক্কর (২৫) তার ভাড়াবাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গুমের পরিকল্পনা করে। ঘরে থাকা ধারালো বটি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে ঘাতক আবু বকর।
এরপর নিজেকে বাঁচাতে আবু বক্কার কথিত প্রেমিকা বা স্ত্রী স্বপ্না বেগমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গ্রেফতারের ভয়ে গাজীপুর গিয়ে তারা অবস্থান নেয়।
রোববার রাতে র্যাবের গোয়েন্দা জালে গ্রেফতার হয় ঘাতক আবু বক্কর। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তার কথিত স্ত্রী স্বপ্না খাতুনকে। র্যাব-৬ এর কমান্ডার (সিও) লে. কর্নেল মোসতাক আহমেদ হত্যাকণ্ডের এই লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
লে. কর্নেল মোসতাক আহমেদ জানান, গ্রেফতার আবু বক্কর (২৫) তার কথিত প্রেমিকা বা স্ত্রী স্বপ্নাকে নিয়ে নগরীর ১ নম্বর গোবরচাকা ক্রসরোডের জনৈক রাজুর বাড়িতে গত দেড় বছর ধরে বসবাস করতো। স্বপ্না তার বিবাহিত স্ত্রী নয়। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই বাড়িতে তারা বসবাস করতো। স্বপ্না নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গত পাঁচ দিন আগে ভিকটিম কবিতা রানী ও আবু বক্করের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে তাদের মধ্যে একাধিকবার কথা হয়েছে। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই গত ৫ নভেম্বর রাতে আবু বক্কর কবিতাকে তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসে। ওই রাতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এ সময় আবু বক্কর কবিতাকে আস্তে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু কবিতা সেটি না করে আরও উঁচু স্বরে কথা বলতে থাকে। এ সময় আবু বক্কর কবিতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে খাটের উপর ফেলে ৫-৭ মিনিট মুখ চেপে ধরে রাখে। এক পর্যায়ে কবিতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে সে। তার জিহবা বের হয়ে যায় ও চোখ উল্টে যায়। তার লাশ গোপন করার কৌশল বের করার জন্য আবু বক্কর প্রথমে তার পরিচিত দুইজন বন্ধুকে ফোন দেয়। এরপর রান্নাঘর থেকে বটি এনে লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে ধারালো বটি দিয়ে উভয় হাতের কব্জি আলাদা করে। পরে তার শরীরের পোশাক আলাদা করে লাশ একটি বক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে।
এছাড়া খণ্ডিত মাথাটি একটি পলিথিনে মুড়িয়ে রাখে। বিচ্ছিন্ন হাতের কব্জি একটি শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে পার্শ্ববর্তী স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর নিজেকে বাঁচাতে আবু বক্কর কথিত স্ত্রী স্বপ্নাকে নিয়ে রূপসা নদী পার হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে আবু বক্কর তখন স্বপ্নাকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের শিকার নারীর পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
তিনি জানান, লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও গোয়েন্দা তৎপরতা চালায়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গত রোববার রাতে আসামি আবু বক্করের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। রাতে তাকে ও তার কথিত স্ত্রীকে গাজীপুর জেলার বাসন থানার চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।
ঘাতক আবু বক্কর মোল্লা বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ভাগা গ্রামের জাকির মোল্লার ছেলে। বর্তমানে সে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার শিববাড়ী সংলগ্ন গোবরচাকা ক্রসরোডের জনৈক রাজুর বাড়িতে বসবাস করতো। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার কবিতা রানী খুলনা মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী এলাকার মৃত কালিপদ বাছাড়ের মেয়ে।